কোরাপুট কাণ্ড (পর্ব ১)


ওড়িশা-অন্ধ্রপ্রদেশ ও ছত্তিশগড় সীমান্তে অবস্থিত একটা পাহাড়ি শহর। ‌যারা প্রকৃতি ভালোবাসেন, রোজকার জীবনের দৌড় থেকে সামান্য ব্রেক নিয়ে, নিজেকে রিচার্জ করতে চান। তাদের জন্য কোরাপুট পছন্দের জায়গা হতে পারে। ২০১৬ সালে আমার কোরাপুট ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ও ছবি এই ব্লগে। আজ প্রথম পর্ব।



কোরাপুটের পথে...


সেবার কাজের চাপটা একটু বেশিই ছিল। তাই অনেকদিন কোথাও যাওয়া হয়ে ওঠেনি। কোথায় ‌যাওয়া যায় তা নিয়ে একুট ভাবনা চিন্তা করছি, তখনই আমার বন্ধু কিশালয় জানাল সে, তার ছোট একটা দল নিয়ে ওড়িশা অন্ধ্রপ্রদেশ ‌সীমান্তে কোরপুট নামের একটা জায়গায় যাচ্ছে। আমার বন্ধু কিশালয় ও চিরশ্রী  ট্যুর অ্যান্ড ট্র্যাভেলস নিয়ে কাজ করছে। ওদের কোম্পানির নাম মনপাখী গ্লোবট্রটার। অচেনা, অজানা  একটা জায়গা দেখা  যাবে, সঙ্গে পাওয়া যাবে বেঁচে থাকার অক্সিজেন। তাই বন্ধুর প্রস্তাবে সম্মতি  দিয়ে দিলাম। ২০১৬ টি-২০ বিশ্বকাপ পর্ব শেষ করে আমার কোরাপুট ‌যাওয়ার পালা।

প্রকৃতির মায়া


কলকাতা থেকে সরাসরি কোরাপুট যাওয়ার একটাই ট্রেন। সম্বলেশ্বরী এক্সপ্রেস। হাওড়া থেকে রাত ৯.৩০। অফিস করে, সোজা হাওড়া স্টেশন। বন্ধুর হাতে টিকিট। নির্দিষ্ট কামরায় উঠে পরলাম। সময়মত ট্রেনও ছাড়ল। প্রায় ২৪ ঘন্টার সফর। বন্ধু কিশালয় ও চিরশ্রী তাদের দলের বাকি সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে এসে সিটে বসল। অনেক দিন পর জমিয়ে আড্ডা। সঙ্গে মু্ক্তির আনন্দ। ওরাই রাতের খাবারের বন্দোবস্ত করেছিল। খাওয়া, গল্প, হাসি-ঠাট্টা করতে করতে রাত প্রায় দেড়টা। ট্রেন তখন টাটানগরে। স্টেশনে নেমে সামান্য পাইচারি। তারপর উঠে সোজা ঘুম। আর একটা নতুন সকালের অপেক্ষা।

টানেল নম্বর ২৯


কিন্তু সেই সকাল যে এত বড়া ধক্কা দেবে কে জানত। সকালে ‌যখন ঘুম ভাঙল তখন ট্রেন কোনও একটা ছোট স্টেশনে দাড়িয়ে। দরজার সামনে গিয়ে কিছুক্ষণ এদিক ওদিক দেখার চেষ্টা করলাম। ফিরে এসে ভাবলাম ফ্রেশ হয়ে আয়েস করে  জানালা দিয়ে ‌যাত্রা উপভোগ করি। কিন্তু আমার ব্যাগ কোথায় ?  তন্নতন্ন করে গোটা কামরা খুঁজেও ব্যাগ পেলাম না। বুঝতে বাকি রইল না, মাঝরাতে কেউ সেটা চুরি করেছে। বেড়াতে ‌যাওয়ার আনন্দ ‌যেন এক ঝটকায় দশ গোল খেল। জামা কাপড়, জুতো, চশমা, টাকা...

পহাড়ি এক ব্রিজে...

ভাগ্য ভাল পিঠের ব্যাগটা সঙ্গে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। তাই মানি ব্যাগটা বেঁচে গেছে। আমার আবস্থা দেখে ট্রেনের কয়েক জন যাত্রী বললেন এই ট্রেনে নাকি রাতে চুরি হওয়ার একটা রেকর্ড আছে। মনে মনে ভাবলাম এটা এখন বলে কি হবে? যা হবে দেখা ‌যাবে। এই ভেবেই মনকে বোঝানোর চেষ্টায় করে গেলাম প্রতিনিয়ত। সকাল গড়িয়ে বেলা, বেলা গড়িয়ে বিকেল। ট্রেন এস থামল রায়গড়া স্টেশনে। এখানে একটা লম্বা ব্রেক। কারণ ইঞ্জিন এবার দিক বদলাবে। সমতল ছেড়ে এবার ওঠার পালা পাহাড়ে।

আলবিদা জানাল সে


পূর্বঘাট পর্বতমালার বুক চিড়ে ট্রেনের লাইন চলেছে। রায়গড়া থেকে কোরাপুট পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় চার ঘন্টা। এই চার ঘন্টার পথে আপনি পাবেন প্রায় ৩৪টি টানেল। বেশকিছু পাহাড়ি ব্রিজ। আর মন ভাল করা প্রকৃতি। যে দিকে তাকেনো যা‌য়, শুধু সবুজ আর সবুজ। অন্ধকার হওয়ার পর চাঁদের আলোয় পাহাড়... সে দৃশ্য ভাষা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা বৃথা। ব্যাগ চুরি যাওয়ার মানসিক ধাক্কা সামলাতে এই চার ঘন্টার পথটা যেন মনোবিদের কাজ করল। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ গিয়ে পৌঁছালাম কোরাপুট।

কোরাপুট স্টেশন...  (ছবিটা ফেরার দিন তোলা)


চলবে...

Comments

  1. দারুন শুরুয়াত, ফেলে আসা দিনগুলোর কথা শুধু মনে পরল না লেখাটা পড়তে পড়তে আর ছবি দেখতে গিয়ে হঠাৎ করে সেইদিনটাতেই ফিরে গেছিলাম।

    পরের অংশের অপেক্ষায় রইলাম....

    ReplyDelete
  2. Darun.... Porer angsotuku taratari likhe felo.....

    ReplyDelete
  3. Darun.... Porer angsotuku taratari likhe felo.....

    ReplyDelete
  4. ফাটাফাটি খনা

    ReplyDelete

Post a Comment